
জসিম উদ্দিন টিপু,টেকনাফ::
টেকনাফজুড়ে ঘরে ঘরে চিকনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রায় বাড়ী-ঘরে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। জেলা ও উপজেলা শহরের হাসপাতাল সমূহে আক্রান্ত রোগীরা আরোগ্য লাভের আশায় ছুটছেন। কিন্তু চিকিৎসা গ্রহণের কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো নাকি একই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে আক্রান্ত রোগী এবং তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানাগেছে।
স্বাস্থ্য সচেতন লোকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, চিকনগুনিয়া রোগটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। সাধারণ এই রোগ হলে আক্রান্ত ব্যাক্তির পানি শুন্যতা দেখা দেয়। সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনূভব করে। মাত্রাতিরিক্ত জ্বরের পাশাপাশি হাঁড় ও বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যাথা দেখা দেয়। এসময় অনেকের পা ফুলে যায়। মুখের রুচি নষ্ট হয়ে; বমি বমি ভাব দেখা দেয়। আক্রান্ত রোগীর ঘুম হয়না; পুরো শরীর দুবর্ল হয়ে পড়ে। এসময় অনেক রোগীর মধ্যে এলার্জির লক্ষণও দেখা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত মে-জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে টেকনাফে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। অনেকটা চিকনগুনিয়ার মত হলেও; পরীক্ষা করে দেখা গেছে ৮০% চিকনগুনিয়ার লক্ষণ পাওয়া গেছে। তবে বর্তমানে রোগটি টেকনাফে ৭০% কমে গেছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রণয় রুদ্র দাবী করেন।
বিভিন্ন এলাকার লোকজনের দেওয়া তথ্য মতে,টেকনাফের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার আশেপাশে এই রোগ বেশী ছড়িয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং তৎসংশ্লিষ্ট এলাকায় এমন কোন ঘর নেই। যে ঘরে কম বেশী সকলে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বর এবং ব্যাথায় ছোট-বড় সকলে কাবু হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে এই রোগে আক্রান্ত শিশু এবং বৃদ্ধ বয়সের লোকজন বেশী দুর্বল হয়ে পড়েন। শরীরে পানি শুন্যতা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে শিশু এবং বৃদ্ধ বয়সের লোকেরা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
স্থানীয় সংবাদকর্মী ফরিদুল আলম জানান, গেল কুরবানীর ঈদের আগে মাত্রাতিরিক্ত জ্বর ও জয়েন্টে প্রচন্ড দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষুধ সেবনের কিছুদিন পর আবারো একই আক্রান্ত হয়ে পড়ি। বর্তমানে জ্বর না থাকলেও এখনো ব্যাথা নিয়ে কষ্টের মধ্যে আছে বলে জানান।
লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ম্যানেজম্যান্ট কমিটির চেয়ারম্যান মো: আলম জানান,ক্যাম্পে এমন কোন ঘর বাকী নেই। যে ঘরের কমবেশী সকলে “আতুর বিয়ারাম” রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা নেওয়ার সপ্তাহ খানিক পর আবারো একই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এই রোহিঙ্গা নেতা।
হেলথ্ এসিস্ট্যান্ড ও লাইফ স্টাইল মেডিসিনে অভিজ্ঞ ডাক্তার মো: রশিদ আল মামুন জানান,রাতে এবং দিনে মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। বসতভিটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং খাবারে হাইজিন মেইনটেইনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জনবহুল স্থানে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া রাত না জেগে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ারও পরামর্শ দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই চিকিৎসক।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: প্রণয় রুদ্র জানান, গত কুরবানীর ঈদের সময়ে টেকনাফে আচমকা এই রোগ দেখা দেয়। জুন মাসে ঢাকা থেকে একটা টীম এসে ২০জনের স্যাম্পল নেন। প্রদত্ত স্যাম্পল পরীক্ষা করে দেখা গেছে; তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। উপজেলার এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন করলে ৭/৮দিন পর এই রোগ ভাল হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক সংক্রামণ রোগ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: শাহজাহান নাজির জানান,আইসিডিডিআরবিতে কক্সবাজার থেকে ২শ স্যাম্পল পাঠানো হয়েছিল। প্রদত্ত স্যাম্পল পরীক্ষা এবং বিশ্লেষণে ৮২% চিকনগুনিয়ার লক্ষণ পাওয়া যায়। তাই এটি চিকনগুনিয়া জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আতংকিত না হয়ে এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া তিনি প্রচুর পরিমাণে পানি পান এবং প্রয়োজন মতো প্যারাসিটামল সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন।
পাঠকের মতামত